সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়,কলাপাড়া প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার সরবরাহকৃত পানির সঙ্গে মাঝে মধ্যে তাজা পোকা মাকড় সহ কেঁচো থাকার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া পৌরসভার সাপ্লাই লাইনের সরবরাহ করা পানি লালচে ও আঠালো। প্রতিদিন ২৫ হাজার মানুষ এ অনিরাপদ পানি পান করলেও এতে যেন চিন্তার কোন কারন নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ১মার্চ ৩.৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে কলাপাড়া পৌরসভা স্থাপিত হয়। ১৩ জুলাই ২০১৫ এটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভায় উন্নীত হয়। ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী পৌরসভার জনসংখ্যা ১৯৭৮২ জন হলেও বর্তমানে পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় পঁচিশ হাজার। পৌরবাসীর পানির চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে ডিপিএইচই ডানিডার অর্থায়নে পৌর শহরের মোজহার উদ্দিন বিশ্বাস অনার্স কলেজ মাঠে স্থাপন করা হয় ৫ লক্ষ লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি ওভারহেড ট্যাংক। ওই ১টি ট্যাংক দিয়েই অদ্যবধি চলছে পানি সেবার কার্যক্রম। অথচ প্রতি ২৪ ঘন্টায় পৌরবাসীর পানি চাহিদা রয়েছে ১৫০০ মিটার কিউব বা ১৫ লক্ষ লিটার। যদিও বাস ষ্ট্যান্ড এলাকায় আর ১টি ওভার হেড ট্যাংক নির্মানের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি রান্নার কাজে ব্যবহারের পর ভাত-তরকারি লাল বর্ন হয়। তবুও এতদিন পৌরবাসী হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, বাসা-বাড়ীতে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি ব্যবহার করে আসছিল। বর্তমানে পানির সঙ্গে মাঝে মধ্যে তাজা পোকা মাকড় সহ কেঁচো থাকার অভিযোয ওঠায় ক্রমশ: অনিরাপদ হয়ে উঠছে এ পানি। এতে যাদের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তারা অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে পানি শোধন যন্ত্র স্থাপন করছেন। আর নি¤œ আয়ের মানুষের ভরসা হয়ে দাড়িয়েছে পুকুর ও গভীর নলকূপের পানি।
পৌর শহরের পানি সাপ্লাই ব্যবহারকারী একাধিক নাগরিক জানান, সাপ্লাই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর আঠালে এবং চুল বিবর্ন হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে কারো কারো শরীরে চুলকায়। বর্তমানে শহরের বহু পরিবার এবং সেই সাথে হোটেল ব্যবসায়ীরা এই পানি সরাসরি ব্যবহার করছেন না। সবাই শোধন যন্ত্র স্থাপন করে নিরাপদ পানি ব্যবহার করছেন।পৌরসভার সবুজবাগ ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুমায়ুন জানান, পৌরসভার সরবরাহকৃত পানিতে প্রায়শ:ই পোকা-মাকড় ও ছোট আকৃতির লাল কেঁচো পাওয়া যাচ্ছে। ফলে পৌরসভার পানি পান করা এখন মারাত্মক ঝূঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে।
পৌরসভার ৮নং ওর্য়াডের বাসিন্দা মো. বাবুল বেপারী জানান, পৌরসভার সাপ্লাই পানি দিয়ে রান্নার কাজ করা যায় না। ভাত ও তরকারি রান্নার পর লাল বর্ন হয়ে যায় এবং রং ও গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আট হাজার টাকা ব্যয় করে বাসায় একটি পানি শোধন যন্ত্র ব্যবহার করেন। এতে পৌরসভার পানির বিলের সাথে তার প্রতি মাসে ২৫০ টাকা ব্যয় কওে শোধন যন্ত্রের কার্বন পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
পৌর শহরের গুরুদেব মিষ্টান্ন ভান্ডার’র মালিক অবিরাম বলেন, তিনি নয় মাস আগে ৫৮হাজার টাকা ব্যয় করে একটি শোধন যন্ত্র স্থাপন করেছেন। ওয়াটার ফিল্টার শোধন যন্ত্র স্থাপন করে নিরাপদ পানি দিয়ে মিষ্টি তৈরি করেন। তিনি আরও বলেন, শোধন যন্ত্রের পানি দিয়ে মিষ্টি তৈরীতে গুনগত মান অক্ষুন্ন থাকে।
পৌর শহরে লঞ্চঘাট এলাকার কালাম হোটেলের মালিক মো. কালাম হোসেন বলেন, সাপ্লাই পানি দিয়ে ভাত রান্না করলে ভাত লাল হয়, তরকারীর স¦াদ নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া পানির রং দেখে পর্যটকরা বোতলজাত পানি কিনে আনে। তাই ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় করে একটি শোধনযন্ত্র স্থাপন করেছি।
কলাপাড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জিহাদ হোসেন জানান, পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার মহাখালীতে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পানি ব্যবহারের উপযোগী। তবে উন্নত পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে সুইজারল্যান্ড গবেষনাগারে পাঠানো হয়েছে।
কলাপাড়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুজ্জামান জানান, পৌর শহরে সরবরাহকৃত সাপ্লাই পানি লালচে ও আঠালো। পানিতে আয়রন থাকায় ভাত ও তরকারি রান্নার পর লাল বর্ন হয়ে যায়। তবে পরীক্ষাÑনিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে পানি নিরাপদও ব্যবহারের উপযোগী।
Leave a Reply